রাজধানীর কলেজগেটে প্রাইভেটকারে ধর্ষণের ঘটনায় জনতার হাতে আটক মাহমুদুল হক রনি রিমান্ডে তার অপকর্মের কথা
স্বীকার করছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
রনি প্রায় রাতেই তিনি লংড্রাইভে বের হয়ে গাড়িতে বসেই মাদক সেবন করতেন। এছাড়া হাজারীবাগে নিজের বাণিজ্যিক শরীর চর্চা কেন্দ্রে (জিম) বন্ধুদের নিয়ে রনি দলবেঁধে মাদক সেবন করতেন। সেখানে বিভিন্ন পার্টিতে কলগার্ল এনে তারা ফূর্তি করতেন।
শনিবার রাতে প্রাইভেটকারে ২১ বছরের এক গৃহবধূকে ধর্ষণের ঘটনায় করা মামলায় সোমবার থেকে শেরেবাংলা নগরে রনির তিন দিনের রিমান্ড চলছে।
রিমান্ডে রনিকে প্রাইভেটকারে ধর্ষণের ঘটনা ছাড়াও অন্যান্য অপরাধকর্ম ও তার সঙ্গীদের বিষয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও শেরেবাংলা নগর থানার এসআই মিনহাজ উদ্দিন।
রনি গভীর রাতে লংড্রাইভে বেরিয়ে এক তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় আটক হওয়ায় পুলিশের ধারণা, তিনি (রনি) ধানমণ্ডিকেন্দ্রিক বিভিন্ন নৈশ অপরাধেও জড়িত থাকতে পারেন।
বিশেষ করে প্রায় সময়েই রাতের বেলা ধানমণ্ডি এলাকায় ছ্নিতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এ সব ঘটনায় রনি ও তার পরিচতিদের সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা রিমান্ডে তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।
গাজীপুরের কাপাসিয়ার চরসনমানিয়া বেপারিবাড়ি এলাকার প্রয়াত আইনজীবী বজলুল হকের ছেলে রনি ধানমণ্ডি-১৫ নম্বরের মিতালী রোডে বড় হয়েছেন। পড়াশোনা করেছেন ধানমণ্ডির গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলে।
বেসরকারি ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে আইন বিভাগে অধ্যয়ন করলেও রনি জিমের ব্যবসা করেন। এছাড়া ধানমণ্ডির ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের যুবলীগের রাজনীতিতেও তিনি জড়িত।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রভাবশালীদের সঙ্গে পরিচয় ও বন্ধুরা সবাই প্রতিষ্ঠিত পরিবারের সন্তান। ফলে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকলেও কখনও এ নিয়ে তাকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়নি।
এমনকি রাজধানীর সড়কে গভীর রাতে লংড্রাইভে বেরিয়ে গাড়িতে বসে মাদক সেবনসহ অপকর্ম করে বেড়ালেও রনি কখনও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েননি। ফলে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে ওঠা রনি সাহায্যপ্রার্থী নারীকে গাড়িতে তুলে ধর্ষণ করেছেন।
শনিবার রাতে কলেজগেট সিগন্যালে ধর্ষণকালে প্রাইভেটকার থেকে রনিকে আটককালে ঘটনাস্থলে থাকা লোকজনও রনির বেপরোয়া আচরণের কথা জানিয়েছেন।
তারা জানান, গাড়ির ভেতরে একজন মেয়ের সঙ্গে রনিকে ধস্তাধস্তি করতে দেখায় তারা গাড়িটিকে থামানোর চেষ্টা করেন।
কিন্তু রনি ও গাড়িচালক ফারুক প্রাইভেটকারটি নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তবে কলেজগেট সিগন্যালে জ্যাম থাকায় তারা বেশি দূর যেতে পারেননি।
এরপর গাড়ির ভেতর থেকে ভুক্তভোগী তরুণীকে বের করেন জনতা। এ সময় চালক ফারুককে বের করে তারা মারধরও করেন।
কিন্তু গাড়ি থেকে মদ্যপ রনি জনতার সঙ্গে চোটপাট শুরু করেন। প্রথমে তিনি হম্বিতম্বি করেন ও রাজনৈতিক নেতাদের পরিচয় দিতে থাকেন।
তবে ভুক্তভোগী তরুণী গাড়িতে ধর্ষিত হওয়ার কথা জানালে জনতা রনিকে রেহাই দেয়নি। তাকে বেধড়ক মারধরের পর শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় বিবস্ত্র অবস্থায় রনিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যাওয়ার পর তিনি বিভিন্ন প্রভাবশালীর সঙ্গে পরিচয় থাকার কথা বলে পুলিশকে সমঝোতার প্রস্তাব দেন।
এ ছাড়া রোববার সকাল থেকেই রনির ঘনিষ্টজনরা থানায় ভিড় করতে থাকে। তারাও রনিকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালান। কিন্তু রনিকে আটক করে মারধরের ঘটনার ভিডিওচিত্র সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেলে তা আর সম্ভব হয়নি।
তবে এ ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর রনির বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের হচ্ছে বুঝতে পেরে তাকে মদ্যপ হিসেবে আটক দেখানোর চেষ্টা করেন তার লোকজন।
এরমধ্যে রোববার বিকালে ধর্ষণের শিকার শ্যামলী এলাকার গৃহবধূ ও গাড়িতে লিফট নিয়ে শিশুমেলায় নেমে যাওয়া আরেক তরুণীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয় পুলিশ।
রাতে তারা শেরেবাংলা নগর থানায় উপস্থিত হন। এরপর ধর্ষণের শিকার গৃহবধূ রনিকে প্রধান আসামি করে অপহরণ ও ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন। এতে ধর্ষণে সহযোগিতার জন্য চালক ফারুককেও আসামি করা হয়।
সোমবার আদালতে হাজির করা হলে রনিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকা মহানগর হাকিম আহসান হাবিব।
মঙ্গলবার দুপুরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মিনহাজ উদ্দিন যুগান্তরকে জানান, রনিকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে। তার কাছ থেকে তথ্য নিয়ে গাড়িচালক ফারুককে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
রিমান্ডে রনির কাছ থেকে অন্যান্য অপরাধে সম্পৃক্ততার বিষয় জেনে তা খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানান এসআই মিনহাজ।